শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘চলার সাথী’ -প্রথম পর্ব সৃজন-প্রগতি ১
ক্ষুব্ধ-সম্বেগে অব্যক্তের বুকে দ্রুত ব্যঞ্জনায়
বিঘূর্ণিত সত্তার উচ্ছৃষ্ট-বিচ্ছুরণ-সংবিদ্ধ সংঘাতকম্পিত
ছন্দে ভাসমান শক্তি-শরীরী প্রতিধ্বনিই আদিবাক্-
সৃষ্টির প্রথম প্রগতি !
২
কম্পিত-কল,সৃজন-উৎস সেই স্ফুটবাক্ বিজৃম্ভিত-
সম্বেগে,আত্ম বিচ্ছুরণে,সহসম্পদে,ভাস-বিস্ফোরণে,
বহুধা-প্রকটে পর্য্যবসিত হইয়াও তাহাই থাকিলেন-
অব্যক্তেরই বুকে ! –
কিন্তু সে স্পন্দনে ব্যক্ত-
বিমুখ সাড়া দিল না !
৩
স্পন্দনপ্লুত, বিপ্লব-বহ্নি, শক্তি-সমুদ্র,
ঘোষ-কল,জাতবাক্ প্রকট-প্রাচুর্য্য হইয়াও তদবস্থ !-
তিনিই ঈশ্বর, আদিবাক পরমদৈবত !
৪
অব্যক্তে বিরাগ-সম্বেগজ-বীচিস্পন্দিতসত্তা সংক্ষুধিত-
আবেগ কম্পনে সিসৃক্ষু
হইয়া উদ্বুদ্ধ-সৃজন-স্রোতে বিক্ষুব্ধ সংঘাতে
ব্যাবর্ত্ত বৃত্তাভাসে চেতনোদ্দীপ্ততায় অসম-বহুল-প্রকটপরায়ণ হইলেন-
আর তিনি প্রোদিতবাক্ !-
৫
বিচ্ছুরিত সত্তার বিশ্লিষ্ট-বিভেদান্তরালে বিক্ষুব্ধ-ব্যষ্টিতে বিভিন্ন-বোধ উপ্ত করিয়া-
অনুস্যূত-আকর্ষণ-উপেক্ষায় সমত্ব হরণ করিল যে-
সে-ই অব্যক্ত !
৬
অব্যক্তের বুকে
বিসৃষত-বাক-বিচ্ছুরণ-
নানা সংঘাতে ক্রিয়া পারস্পরয্যে প্রকটিত অসমে
বিভিন্ন ব্যষ্টিতে স্ফোটপ্রানে অনুপ্রানিত হইয়া-
সূক্ষ্ম ও স্থুলে
বিবর্তিত হইল !
৭
এমন করিয়া জীবন্ত রক্তমাংস
সংক্ষুব্ধ-সম্বেগে
যোজন আকুল্যে জীবন্ত শরীর-পরিগ্রহে
জবীজন্ততে পর্য্যবসিত হইয়া ক্রমাধিগমনে
নারাকৃতিতে উন্নীত হইয়া ক্রমোদ্বোধনে
আশায়-আসক্ত-জ্ঞান-কর্ম-ধী সম্বিত
হইয়া উঠিল !-
আর, বিরাম-বিভেদ-বিশেষ জাহা-কিছু
ব্যষ্টি-পরিপার্শ্বিক হইয়া তৎসংঘাত পারস্পর্য্যে
স্ফোট-চেতনায় উদ্বুদ্ধ হইল-
কিন্তু আদিবাক্ স্বসত্তায় স্থিত থাকিয়া
জনগন-সমূহের পরমজনয়িতারূপে
স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত রহিলেন !
তাই যখনই পরমে-আকৃষ্ট বিমহিত-বিশেষ
সম্বেদনে জীবকলুষ-ক্লিষ্ট, উক্ত্যক্ত, বেদনাপিষ্ট
আর্ত্ত-আশ্রয়-উত্তার
প্রকট হইয়া পরিস্থিকে সেবা, উদ্যম ও ভরসার ব্যজনে সুস্থ ও উদ্দীপ্ত করিয়া
শ্রেয় পরিবেশনে মুক্ত করিয়া তোলেন, তিনিই রক্তমাংস-সংস্কুল জিবপ্রভ
নরনারায়ণ মানুষের আদর্শ-
মুক্তির জ্যোতিষ্মান্ উদার উন্নত বর্ত্ম !
৮
তাই উদ্দীপ্ত-সহানুভূতি-উদ্বুদ্ধ-মুগ্ধ প্রণয়ে
আকুলৎক্ষেপে জিবন-বর্দ্ধনে সঞ্চালনস্বভাব-
প্রিয়-পরমে আলিঙ্গন-উদ্বেল যখনই যে-
উদ্ভাসিত জ্ঞানাধিগমে
প্রজ্ঞোদয়রশ্মিজালে অজানা অব্যক্তের
ক্রমনিরসন তখনই তার !
৯
আর,বিকীর্ণপ্রজ্ঞা মুক্তজীবন
ব্যষতি-পরিপার্শ্বিকে
আদর্শের সার্থক পরিপূরণে দীপ্ত সম্বেগসঞ্চে
বিবর্দ্ধন-বিন্যাসে
আরো আরো-তর উন্নতি পরিব্যাপনে
ক্রম-স্মৃতি-বিকশনে
সেবাততৎপরতায় প্রিয়-পরমে
আত্ম-ইন্ধন-দগ্ধোজ্জল-ঝকমকদীপ্তিতে
উজ্জলতর করিয়া-
আলিঙ্গল-আহুতিতে
প্রাণতর হয় !
১০
বিরাগোচ্ছ্রিত-
বিপরীত সমসত্তায় মিলন-প্রবনতায়
সনির্ববন্ধ-আসক্তি-ক্ষুধিত-শোষণে
উপ্তি-আহবানে-আকৃষ্টকরণে ধৃতিশিহরণে
পরিমাপিত-বিশেষ-বিবর্দ্ধনে আকৃষ্ট করতঃ
উৎসৃত করতঃ পশোনে বর্ধন করে যে-
নারী সে-ই;
আর সম্বেগোদ্দীপ্ত-
পূরন-স্বভাব উপ্তি-আনত নারী সম্বর্দ্ধন-হৃষ্ট
গউরব-মুখর আহৃতি-পর পালনযুত যে-
সে-ই পুরুষ;-
তাই, পুরুষে আদর্শে অনুদ্ভূত-প্রণয়ে
শোষণক্ষুধ-কামিনী-আনতি
বর্দ্ধন-বিমুখতায় বিব্রত করিয়া বিধবস্তিতে
বিলীন করিয়া ফেলে !
চলার সাথী-০১ চলার সাথী তুমি জগতে প্লাবনের মত ঢলিয়া পড়-
সেবা, উদ্যাম, জীবন ও বৃদ্ধিকে লইয়া
ব্যাষ্টি ও সমষ্টিতে তোমার আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করিয়া-
আর, নারী যদি চায়-ই তোমাকে
তবে ছুটুক সে তার মঙ্গলশঙ্খনিনাদে
সব-প্রান মুখরিত করিয়া তোমার দিকে,-
কিন্তু সাবধান ! চেও না তুমি তা’! ০১।
কৃতকার্যতায় ক্রমাগতি তুমি জান বা না জান,
পার বা না পার –
তোমার চেষ্টার ক্রমাগতি অটুট,
অব্যাহত থাক, –
সিদ্ধির পথ খুঁজিয়া লও- কৃতার্থ হইবে,
কৃতকার্য্যতা আসিবে;
আর, তোমার প্রতিষ্ঠা তোমার আদর্শকে
প্রতিষ্ঠিত করিবেই – নিশ্চয়ই জানিও! ০২।
যশস্বিতায় সেবা তুমি মানুষের এমনতর নিত্য-প্রয়োজনীয়
হইয়া দাঁড়াও –
যাহাতে তোমার সেবায় তোমার পারিপার্শ্বিক
যথাসাধ্য প্রয়োজনকে পূরণ করিয়া
জীবন যশ ও বৃদ্ধিকে আলিঙ্গন করতে পারে;-
আর, এমনি-করিয়াই তুমি
প্রত্যেকের অন্তরে ব্যপ্ত হও
ও এগুলি তোমার চরিত্র হইয়া দাঁড়াক,-
দেখিবে, যশ তোমাকে ক্রমাগত
জয়গানে যশস্বী করিয়া তুলিবে – সন্দেহ নাই! ০৩।
প্রকৃতির ধিক্কার প্রকৃতি তা’দেরই ধিক্কার করে
যা’রা প্রত্যক্ষকে অবজ্ঞা বা অগ্রাহ্য করিয়া
পরোক্ষকে আলিঙ্গন করে;-
আর, পরোক্ষ যা’র প্রত্যক্ষকে
রঞ্জিত ও লাঞ্ছিত করে —
সে-ই ফাঁকির অধিকারী হয়! ০৪।
দুঃখের চিন্তায় দুঃখের চিন্তায় বিব্রত থাকিও না –
দুঃখের ভাব কাহাকেও
আনন্দিত করিতে পারে নাই ! —
বরং কিসে মানুষকে সুখী করিতে পারিবে,
মানুষ কেমনতর ব্যবহার পাইলে সুখী হয় —
তা’ কেমন করিয়া করিতে পারা যায় ইত্যাদি
চিন্তা কর,
আর কাজে লেগে যাও; –
নিজেও সুখী হইবে
আর, অন্যকেও সুখী করিতে পারিবে! ০৫।
ভালোবাসায় জ্ঞান মানসিক স্বস্থতা এবং ভালোবাসা হইতেই
জ্ঞান ও শুভদর্শিতার আবির্ভাব হয় —
কিন্তু দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস ও বিতৃষ্ণা হইতে
অজ্ঞানতা ও নিরাশা-প্রবণতারই
সৃষ্টি হইয়া থাকে! ০৬।
পরশ্রীকাতরতা যদি নিজেকে বিশ্রী করিয়া বিপথে
বিপন্নই হইতে চাও —
তবে পরশ্রীকাতরতাকে
কিছুতেই ত্যাগ করিও না! ০৭।
ভালবাসায় কর্ম্মপ্রবণতা ভালবাসা হইতে দৃঢ়তা, আমোদশীলতা
ও কর্ম্মপ্রবণতার অভ্যুত্থান হয়,
আর, ভাল-না-লাগা হইতে
অবসন্নতা, অকর্ম্মণ্যতা, দু:খ ও
আশান্তিই আসিয়া থাকে! ০৮।
শুভদর্শী আর মন্দদর্শী শুভদর্শীই দেখতে পায়
আপদ, বিপদ, ব্যাঘাত ও দুঃখের ভিতর
একটা উন্নতি ও আনন্দের সুবর্ণ সুযোগ ! —
কিন্তু মন্দদর্শী সব ভালোর ভিতর-ই
অবাধে দেখে নেবে অপারগতা, অসম্ভবতা –
একটা দুরদৃষ্টের দুরপনেয় দুর্ভোগ ! ০৯।
দোষদৃষ্টি উন্নতির অন্তরায় যদি উন্নত হইতে চাও —
দোষ দৃষ্টিকে চিরদিনের মত বিদায় দাও,
মানুষের গুণের যাহা-কিছু দেখ
তাহাই ভাব, তাহাই বল,
আর, আলোচনা কর; –
পার তো সাবধান থাকিও –
কাহারও দোষ তোমাতে
কোন প্রকার ক্ষতির সৃষ্টি না করিতে পারে ! ১০।
দোষদর্শনে দোষ দেখতে হ’লেই –তা’ ভাবতে হবে,
চিন্তা ক’রে বের ক’রতে হবে,-
আর, তার সাথে
একটা বিরক্তির বা আক্রোশের বোধকে
সজাগ রাখতে হবে ; –
আর, এই ক’রতে গেলেই
মস্তিষ্কে ঠিক অমনতর ভাব-ই মজুত থাকবে,
দেখতে পাবে কিছুদিন পরে
সেই দোষ গুলির অভিনয় তুমি
কেমনতর ভাবে করছ ; –
তাই, সাবধান হও –
দোষ-দেখা হ’তে,
দোষ-ভাবা হ’তে,
বিরক্তি ও আক্রোশ হ’তে ! ১১।
দোষ রিক্তকরণে আর, যদি দেখেই ফেলে থাক কারও দোষ, –
তোমার মাথায় তা’ মজুত-ই থাকে –
তার কারণ ও অবস্থাকে অনুসন্ধান ক’রে –
কেমন ক’রে তা’ সম্ভব হ’য়েছে তার পক্ষে
যথাযথভাবে বুঝে –
একটা সহানুভুতির ভাব নিয়ে
যা’ তোমার মাথার ভিতর মজুত আছে –
তা’কে এমনতরভাবে রিক্ত কর
যা’তে আবার অমনতর ঘটা-ই
তোমার পক্ষে অস্বাভাবিক হয়! ১২।
কপটতা কপটতা পারিপার্শ্বিককে ভ্রান্ত করিয়া
নিজের উন্নতির কবাট রুদ্ধ করিয়া দেয় ! ১৩।
চরিত্র নির্ণয়ে তোমার চলা ও বলা-ই বলিয়া দেয় –
তুমি কেমন মানুষ, কি চাও –
আর, কি-ই বা পেতে পার ! ১৪।
সিদ্ধি লাভে করা, লেগে-থাকা, দেখা
ও অনুধাবন করা –
এই কয়টিই বোধ, বিজ্ঞান, দক্ষতা
ও সিদ্ধিকে প্রতিষ্ঠা করে ! ১৫।
কৃতার্থতার রাজলক্ষণ বিশ্বস্ততা, কৃতজ্ঞতা ও কর্ম্মপটুতার সহিত
যাহার বিপদের ভিতর
শুভ ও সুযোগ-দর্শন ফুটিয়া ওঠে –
তুমি অতি নিশ্চয়তার সহিত
বলিয়া দিতে পার –
সে যেমনই হউক না কেন –
কৃতার্থতার মুকুটে তাহার মস্তক
সুশোভিত হইবেই হইবে! ১৬।
প্রেমে দক্ষতা ও নিপুণতা একমাত্র ভালবাসা-ই আবিষ্কার পারে
তার প্রিয় কেমন করিয়া
জীবন, যশ, প্রীতি ও বৃদ্ধিতে উন্নত হইয়া
তাঁর পারিপার্শ্বিকে উচ্ছল হইতা পারে, –
তাই প্রেম বা ভালবাসা-ই
মানুষে সহজ জ্ঞানের সমাবেশ করিয়া
দক্ষতা ও নিপুণতার সহিত
তাঁহাকে বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠিত করে ! ১৭।
চিন্তা-বিলাসী যখনই দেখবে
তোমার যে-কোন চিন্তাও চলন কর্ম্মকে ডাকিয়া আনে না
বা তাতে লাগিয়াও থাকে না –
বুঝিও তা’ তোমার চিন্তা বা কল্পনার-ই বিলাসিতা! ১৮।
খাঁটি চাওয়ার কষ্টিপাথর তোমার কোন চাওয়ার জন্য
বিপরীত প্রবৃত্তিগুলিকে তাচ্ছিল্য করতে পারছ না –
এই হচ্ছে জানার উপায়
যে তোমার চাওয়া খাঁটি নয় ! ১৯।
ইচ্ছা-বিলাসী যা’ চাচ্ছ – তোমার চলন, চরিত্র, বাক্,
ব্যবহার ও ক্রমাগতি অর্থাৎ লেগে-থাকা
যেমন ক’রে বা যেমন হ’লে তাকে পেতে পারে
তার ধার দিয়ে যাচ্ছে না বা যেতে কষ্ট হচ্ছে,-
নির্ঘাত বুঝবে –
তোমার চাওয়া তো খাঁটি নয়-ই,
বরং তা’ চাওয়ার বিলাসিতা মাত্র! ২০।
ধারণানুরঞ্জিত দর্শন তোমার চিন্তা ও চলন
তোমাকে যেমনতর প্রকৃত করিয়া তুলিয়াছে –
তুমি যেখানেই যাও না,-
যাহাই দেখ না, – তোমার প্রকৃতি
পারিপার্শ্বিককে তাহাই ভাবিবে, তাহাই দেখিবে ! ২১।
চলার সাথী-০২
জয়ে প্রয়োজন-পূরণ জয়ই যদি করিতে চাও
বাহ্যিক শক্তিচালনায় অভিভূত করিয়া নয়,-
তাহার প্রয়োজনপূরণে
তুমি মুখর ও বাস্তব হইয়া দাঁড়াও! ২২।
পারায় ‘হাঁ’ পারা আর না-পারার মধ্যে ততটুকু তফাৎ
যতটুকু ‘হাঁ’ আর ‘না’র ভিতর ; –
পারাতে যে ‘না’কে ডেকে আনে না,
যার পারা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন নেই
অথচ করাকে অবলম্বন করে,-
করার আনন্দে কোন-কিছুতে থেমে যায় না,
সে পারে ! ২৩।
পারায় ‘না’ আর, পারার চিন্তাকে যে ‘না’ কে ডেকে এনে
ক’ষে নিতে চায় – ‘না’ যার এত বিশ্বস্ত! –
‘না’ কে বাদ দিয়ে যার কোন ভাব,
কোন চিন্তা, কোন কর্ম্ম-চালনাই হ’য়ে ওঠে না,
পারা বা করার সাজ-সরঞ্জাম সে যতই করুক না কেন,
তার সবটাই ‘না’ টাকে আলিঙ্গন ক’রে
অবশ হ’য়ে ঘুমিয়ে পড়ে! ২৪।
সিদ্ধির পথ পারি-না ভাবা বা পারায় সন্দেহ
কার্য্যতঃ ‘না-পারা’কেই সৃষ্টি করে; –
পারায় ‘না’ বা সন্দেহকে তাড়িয়ে দাও –
লেগে থাক, চেষ্টা কর, সিদ্ধি সম্মুখেই তোমার ! ২৫।
‘না’-এর কুটুম্বিতায় ‘না’ যাহার সহধর্ম্মিণী ‘হয় না’ যা’র শ্যালক
সে যদি অভিনন্দিত হয় –
দুর্দ্দশার সিংহাসন অটল থাকিবে সন্দেহ নাই ! ২৬।
কর্ম্মপটুতায় অনুপ্রাণতা অনুপ্রাণতা যেখানে যত সহজ ও তরতরে
কর্ম্মপটুতা সেখানে তত স্বাভাবিক ও উদ্দাম ! ২৭।
সুখ যা’তে তোমার being-টাকে (সত্তাকে)
সজীব, উন্নত ও আনন্দিত করিয়া
পারিপার্শ্বিকে চারাইয়া,
সবাইকে উৎফুল্ল করিয়া তোলে –
সুখ যদি বলিতে হয় –
তাহাকেই বলা যাইতে পারে! ২৮।
প্রয়োজনানুপূরণে আলস্যকে প্রশ্রয় দিও না, সেবা-তৎপর হও,
সংবর্ধনায় মানুষকে অভিনন্দিত কর,–
সাধ্যমত, যেমন করিয়া পার
অন্যের প্রয়ােজনের অনুপূরক হও, —
নিজে তুষ্ট ও তৃপ্ত থাকিয়া পরকে তুষ্ট
ও তৃপ্ত কর ;-
দেখিবে না চাহিলেও অর্থ, ঐশ্বৰ্য্য তােমাতে
অবাধ হইয়া থাকিবে,
দরিদ্রতা – দূরে দাঁড়াইয়া তােমাকে অভিবাদন করিবে! ২৯।
বঞ্চনায় যদি বঞ্চনার প্রেম অটুট রাখিতে চাও,
তবে যাহা হইতে পাইয়া পুষ্ট হইতেছ,
তাহাকে পুষ্ট করার ধান্ধায় কেন কষ্ট পাইবে ? ৩০।
দরিদ্রতার বন্ধু আলস্য, অবিশ্বাস, আত্মম্ভরিতা ও
অকৃতজ্ঞতার মতন বন্ধু বা মিত্ৰ থাকিলে
দরিদ্রতাকে আর খুঁজিতে হইবে না;
এমনকি ইহাদের যে-কোন একটিও
দরিদ্রতার এমন বন্ধু
ইহাদের কাহাকেও ছাড়িয়া যেন সে
থাকিতেই পারে না,
এমন ধন যদি তােমার অন্তরে বসবাস করে,
দুঃখের অভাবের বালাইকে আর সহ্য করিতে হইবে না! ৩১।
কাজ পণ্ডকৱণে দীর্ঘসূত্রতা দীর্ঘসূত্রতা আলস্যেরই সম্বন্ধী
কাজ পণ্ড করার গুরুঠাকুর !-
যাহা করণীয় তৎক্ষণাৎ করিয়া
দীর্ঘসূত্রতাকে বিদায় করিও ;-
দক্ষতা ও কার্যসিদ্ধি তোমার অনুচর হইবে! ৩২।
লোভে যথোপযুক্ত প্রয়োজনকে অতিক্রম করিয়া
অতিরিক্তে উদ্গ্রীব আকাঙক্ষাকেই
লোভ বলা যাইতে পারে ;-
তুমি ঐ অতিক্ৰমণ হইতে
সাবধান থাকিও কারণ উহা তোমাকে
অবসন্নতায় চালাইয়া মৃত্যুতে নিঃশেষ করিতে পারে ! ৩৩।
ক্রোধে দুর্দশা ক্রোধ যাহাকে ক্ষিপ্ত করিয়া
স্বার্থান্ধতার অবশতায় অন্যকে ব্যাহত করায়,
দুর্দশা দিগ্বিজয়ী হইয়া
অট্টহাস্যে তাহার অনুসরণ করে। ৩৪।
স্বার্থ যাহা হইতে পাওয়া ঘটিতেছে—
তাহাকে পূরণ করিয়া, উচ্ছল করিয়া,
পাওয়াকে অবাধ করাই স্বার্থের তাৎপৰ্য ;-
পাওয়ার উৎসকে পূরণ না করিয়া
গ্রহণ যেখানে মুখর হইয়াছে,
স্বার্থ সেখানে ভ্রান্তির কবলে পড়িয়া
ম্লান ও মুহ্যমান নিশ্চয় ! ৩৫।