বহুকাল পূর্বের কথা ।
সৎসঙ্গের তৎকালিন সভাপতি ঋত্বিকাচার্য্য শ্রীযুক্ত কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্য (এম.এ) , শ্রীশ্রীঠাকুরের রচিত ‘সত্যানুসরণ’ পুস্তিকাখানি লইয়া একবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বইখানির কিছুটা পাঠ করিয়াই জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘ইহার বয়স কত?’ কৃষ্ণপ্রসন্ন তদুত্তরে বলেছিলেন, ‘তাঁর বয়স বেশী নয়, সবে মাত্র যৌবনে পদার্পণ করেছেন’। পুস্তকখানার আরও কিয়দংশ পড়িয়া কবিগুরু পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কত বয়স বললে?’ কৃষ্ণপ্রসন্ন পূর্বপ্রদত্ত উত্তরেরই পুনরাবৃত্তি করিলেন। পুস্তকের আরো কিয়দংশ পাঠ করিয়া রবীন্দ্রনাথ আবার সেই একই প্রশ্ন করিলেন, ‘কত বয়স বললে যেন?’ রবীন্দ্রনাথ বিস্মিত হইয়া গিয়েছিলেন – এত অল্প বয়সে এরূপ স্বচ্ছ সাবলীল ছন্দে, অপরুপ ভঙ্গিতে, গভীর তত্ত্বসমূহের এমন অপূর্ব প্রকাশ কি করিয়া সম্ভব হয়!
ইহার কিছুদিন পরে সৎসঙ্গের তৎকালিন সহ-সভাপতি শ্রদ্ধেয় শ্রীযুক্ত সুশীল চন্দ্র বসু (বি.এ.) কবিগুরুর সাক্ষাৎ করেন। কবিগুরু সুশীলচন্দ্রের সহিত শ্রীশ্রীঠাকুর ও সৎসঙ্গের কর্মপ্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে আগ্রহ সহকারে নানা আলাপ-আলোচনাদি করিয়াছিলেন। এ সাক্ষাৎকারের কথা বিবৃত করে সুশীলচন্দ্র লিখেছেন:
“একবার শান্তিনিকেতনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। নানা কথার পর শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর কর্মপ্রতিষ্ঠান সম্বন্ধীয় আলোচনা প্রসঙ্গ উঠিতেই, তিনি বললে, ‘আমি শুনিয়াছি তোমরা কাজকর্ম খুব ভালই করিতেছ, তোমাদের কোন অভাব অভিযোগ নাই, কিন্তু দেখ, আমার এই বৃদ্ধ বয়সে অপটু শরীর লইয়া ছেলে মেয়ে নাচাইয়া আমার এই প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ সংগ্রহ করিতে হইতেছে!’
তাঁর কথা শুনে আমি অবশ্যই খুব দুঃখবোধ করিয়াছিলাম, তাহাকে বলিলাম, ‘অন্যের নিকট হইতে একথা শুনিলে বিস্মিত হইবার কোন কারণ ছিল না, কিন্তু আপনার নিকট হইতে শুনিয়া বিস্ময় বোধ না করিয়া পারিতেছি না। আপনি নিজে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলিয়াছেন।
কর্ম প্রতিষ্ঠান গড়িতে দেশের লোকের সক্রিয় সহানুভূতি কিরূপ পাওয়া যায় তাহা আপনি বিলক্ষণ অবগত আছেন। আপনি ধনী পিতার সন্তান, আপনি বিশ্বকবি, জগৎজোড়া আপনার খ্যাতি, তথাপি প্রতিষ্ঠানটিকে চালাইতে ছেলে মেয়ে নাচাইয়া আপনাকে অর্থসংগ্রহ করিতে হইতেছে, বৃদ্ধ বয়সে এজন্য আপনার উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সীমা নাই। আর আমাদের প্রতিষ্টানের প্রাণপুরুষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র দরিদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান – আপনার ন্যায় খ্যাতি প্রতিপত্তি তো দূরের কথা, তিনি তাঁহার নিজের দেশবাসীর কাছেই এখনও একরূপ অপরিচিত – এমতাবস্থায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোন অভাব-অভিযোগ নাই, ইহা আপনি কিরূপে অনুমান করিতে পারিলেন? ’ আমার কথা শুনিয়া তিনি নিরুত্তর রহিলেন। – বস্তুত যাঁহারাই কোন কর্মপ্রতিষ্ঠান (বিশেষত অভিনব ধরণের ) গড়িয়া তুলিয়াছেন তাহারাই জানেন যে এই দেশে কোন প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তুলিতে কি পর্বতপ্রমাণ বাধাবিঘেœর সম্মুখীন হইতে হয়। ”
Read More On IstoKathan:
https://istokathan.com/%e0%a6%b8%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%81%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%a3-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%b9%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%96/
কিভাবে কথা বলতে হয়’ -উত্তরে শ্রীঠাকুর
সক্রেটিসের ফর্ম্মুল’ নিয়ে আলোচনা- বড়দা ও শ্রীশ্রীঠাকুর
https://istokathan.com/%e0%a6%a6%e0%a7%80%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8b%e0%a6%b0/